শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থটি কে কত খ্রিস্টাব্দে কোথা থেকে আবিষ্কার করেন? এদুটির কাব্যমূল্য এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এর গুরুত্ব আলোচনা কর? Burdwan University (পূর্ণমান-10)
উত্তর : শ্রীকীর্তন' গ্রন্থটি ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে) বসন্তরঞ্জন বিষৎবহৃত মহাশয় বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের কাকিল্যা গ্রামের জনৈক দেবেন্দ্রনা মুখোপাধ্যায়ের গোয়াল ঘরের মাচা থেকে আবিষ্কার করেন।
বড়ুচণ্ডীদাস, আদি-মধ্যযুগে রাধাকৃষ্ণের প্রণয় ব্যাপার নিয়ে 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' প্রশ্নটি রচনা করেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম থেকে কাব্যের সূচনা এবং রাধাকে পরিত্যাগ করে মথুরায় চলে যাওয়ায় কাব্যের সমাপ্তি। গ্রন্থটি মোটামুটি তেরোটি খণ্ডে বিভক্ত- যেমন জন্মগ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" গ্রন্থটি গীতিনাট্য বা অপেরার আঙ্গিকে রচিত। এই কাব্যের তিনটি চরিত্র প্রধান রাধা, কৃষ্ণ ও বড়াই। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পর থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত আখ্যান অত্যন্ত বাস্তবতার সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। তাম্বুল খন্ডে শ্রীকৃষ্ণ রাধার প্রতি প্রেম নিবেদন করেন এবং প্রত্যাখ্যাত হন। অপমানিত হয়েও কৃষ্ণ পিছু না হটে রাধা মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যান। কিছুকাল পরে রাধা ধীরে ধীরে কৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট হন। অবশেষে রাধা যখন কৃষ্ণের জন্য সব করতে প্রস্তুত তখন তিনি রাধাকে পরিত্যাগ করে কাস বধের জন্য মথুরায় চলে যান। হঠাৎই এখানেই কাব্যটির সমাপ্তি। মোটের উপর রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাবাটির মূল বিষয়। কিছু কাব্যটির বৈশিষ্ট্য এই যে, এখানে শ্রীকৃষ্ণকে ঐশ্বর্যময় পুরুষরূপে দেখানো হয়েছে। বিস্তৃত কবি তাঁর কাব্যের কাহিনী সংগ্রহ করেছিলেন ভাগবত থেকে। তাই চৈতন্য পরবর্তী বৈষ্ণব পদাবলীতে ফের যে মধুর প্রেমময় রূপের সঙ্গে পাঠক পরিচিত আলোচা কাব্যগ্রন্থে তা নুপস্থিত। গ্রন্থটি তৎকালীন গ্রামীণ সমাজে সঙ্গীত সহযোগে পরিবেশিত হত। তাই প্রতিটি পদে শীর্ষে বিভিন্ন রাগ-রাগিনীর উল্লেখ আছে। বহুচণ্ডীদাসের কাব্যে সবচেয়ে বেশী চোখে পড়ে মানবতা ও বাস্তবাধা। কাব্যটির তিনটি চরিত্র সর্বত্র বাদ প্রতিবাদে মুখর। বাস্তব রসকে প্রতিষ্ঠা দেবার জন্য এই কৌশল সংলাপ রচনায় রয়েছে যথার্থ বাস্তব -
"কৃষ্ণঃ তার বহায়িলে রাধা নানা পরবন্ধে।
বড় দুখে পাইলো খায় ভৈল মোর কাছে।৷
রাধা যিনি দুঃখে সুখ নাহি কথাহো কাহ্নাঞ্জি।
তাঁর নহে শুষ্ক চোখে আপন বড়ায়ি।৷
লিরিকধর্মী রচনার সুবির কৃতিত্ব স্পষ্ট এই কাব্যে। রাধার প্রেম এখানে অবিমিশ্র মানবিক, চরিত্রটির অন্তিম রূপান্তরে বিরহিনী রাধা বেদনা বিহ্বলতা ধরা পড়েছে। এইভাবে—
“কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কুলে।
কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে।৷
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন।
বাঁশুরী শবদেঁ মোর আউলাইলোঁ রন্ধন।।